২০৩০ সালে পোশাক পণ্য রপ্তানি আয় হবে ১০০ বিলিয়ন ডলার

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ১০০ রিলিয়ন ডলার রপ্তানি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। সেই সময়ে পোশাক খাতের সরাসরি ৬ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থান হবে।

মঙ্গলবার দুপরে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বিজিএমইএ-এর নতুন লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে এমন প্রত্যাশা করে সংগঠনটি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

 প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, দেশের উন্নয়নের এ ধারা বজায় রাখতে সমস্যাগুলো এখনই চিহ্নিত করতে হবে। সব সমস্যার সমাধান করে আরও এগিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি আগামীতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বজায় রাখতে হবে। আমাদের উন্নয়নের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

শিরীন বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের বড় সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। আমরা নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করেছি। নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পেরেছি এটাই আমাদের সক্ষমতার বড় প্রমাণ।

পরিবর্তনকে আমরা কখনই পরিবর্তন করতে পারিনা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে এসডিজির বাইরে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

মিরান আলী পোশাক রপ্তানির চিত্র তুলে ধরে বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪২.৬২ বিলিয়ন ডলারের; যা মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশ। এই বছরে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি আয় হয়েছে ৫২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় হবে ১০০ বিলিয়ন ডলার।

অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জন করতে পারাটা অনেক বড় অর্জন। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আর ডেনিমে আমরা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে সব দেশকে পেছনে ফেলে প্রথম অবস্থানে আছি।

তিনি আরও বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক সহায়তা এবং শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ওপর ভর করে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি, যা আমাদের রপ্তানি চিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ সালে বিশ্ববাজারে আমাদের পোশাকের শেয়ার ছিল ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ, অর্থাৎ আমাদের সামনে সুযোগ অপরিসীম। যদিও ২০২১ সালের পরিসংখ্যানটি এখনও প্রকাশ হয়নি। আশা করছি ২০২১ সালে আমাদের বৈশ্বিক শেয়ার ৭ শতাংশ অতিক্রম করবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা আমাদের শেয়ার ১০ শতাংশে নিয়ে যেতে পারব। তবে সবকিছু নির্ভর করছে বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিধারা অব্যাহত রাখতে বেসরকারিখাতের অবদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পর আমরা পণ্য রপ্তানিতে অগ্রাধিকারমূলক সহায়তাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবো, যা আমাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণে ব্যবসা পরিচালনা সহজীকরণ এবং পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমাতে আমাদের অবশ্যই ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় হ্রাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধির প্রতি আরও বেশি মনোনিবেশ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গত ৫০ বছরে আমারা শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি মডেল অনুসরণ করেছি। আগামী দিনে আমাদের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে, কারিগরি ও উদ্ভাবনী উৎকর্ষতা এনে, শিল্প-শ্রমিক-সমাজ-পরিবেশের মধ্যে একটি সামগ্রিক ইকো-সিস্টেম এনে প্রবৃদ্ধির পরবর্তী মডেল নির্ধারণের সময় এসেছে। এজন্য আমরা একটি রূপকল্প তৈরি করেছি।

তিনি বলেন, বিজিএমইএ টেকসইশিল্প নির্মাণের কাজ অনেক আগে থেকেই শুরু করেছে, বিশেষ করে শিল্পে ঘটে যাওয়া কিছু দুর্ঘটনার পর শোককে শক্তিতে পরিণত করে শিল্পের পুনর্গঠন ও রূপান্তরের বিষয়ে আমরা ব্রত হই। সরকার, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও আইএলও কে সাথে নিয়ে দেশি-বিদেশি এক্সপার্টকে দিয়ে প্রতিটি কারখানার নিরাপত্তা মূল্যায়ন করা হয়েছে, রিমেডিয়েশন করা হয়েছে। আমরা শুধুমাত্র নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলাম, তা নয়। বরং আমরা সামাজিক ও পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন ও শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যাপক অগ্রগতিসহ অনেক উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে একটি ট্রান্সপারেন্ট অর্থাৎ পরিচ্ছন্ন শিল্প গঠনে সক্ষম হই। যার কারণে আমাদের এ শিল্পটি দেশে বিদেশে বহুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০২৬ এর পর চলতে হলে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। টেক্সটাইল খাতের মধ্যে বিনিয়োগের জন্য অনাবিষ্কৃত ও অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত হচ্ছে ম্যান-মেইড ফাইবারভিত্তিক ইয়ার্ন এবং ফেব্রিক্স, যেমন পলিয়েস্টার, ভিসকস, স্প্যানডেক্স, মেলাঞ্জ প্রভৃতি।

বিশ্ব বাজারে কটন বস্ত্রের শেয়ার এবং পোশাকের ব্যবহার মাত্র ২৫ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত তৈরি পোশাকের ৭৫ শতাংশ কটন পণ্যগুলোতে কেন্দ্রিভূত। সাম্প্রতিককালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের বড় ক্রেতা ইউরোপ ও আমেরিকার বাজার ধরার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। সঙ্গতভাবেই উদ্যোক্তারা এ ক্ষেত্রের প্রতি তাদের মনোযোগ বাড়িয়েছেন। বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকে সাধারণ পোশাকের পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের বা ব্যতিক্রমী পোশাক তৈরিতে সদস্যদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে।

তৈরি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাত- যেমন সিরামিকস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট, আইটি ইত্যাদির দিকে যেমন আমাদের মনযোগ বাড়ানোর কথা বলছি। তবে বস্ত্র ও তৈরী পোশাক খাতের মধ্যেও বহুমুখীকরণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন, ২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, সুতা, কাপড়, হোম টেক্সটাইল এবং বিশেষায়িত টেক্সটাইল ও ক্যাপের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ২ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৭২০ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলার। ১২ বছরের ব্যবধানে এসব পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫৩.৫০ শতাংশ, যা নিঃসন্দেহে আমাদের পণ্য বহুমুখিকরণ সম্ভাবনার বিষয়টি প্রমাণ করে।

রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের সাথে সাথে বাজার বহুমুখীকরণেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অ্যাপারেল ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে আমরা নতুন-নতুন বাজার তৈরি ও আমাদের মূল বাজারগুলোতে কিভাবে রপ্তানি আরও বাড়াতে পারি সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।